বরগুনা: চলমান অর্থবছরে সরকারি স্কুলের বরাদ্দের টাকা দিয়ে বরগুনায় খাসি কেটে ভুরিভোজের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরাদ্দের স্লিপ ও ক্ষুদ্র মেরামতের টাকায় মোট তিনটি খাসি কেটে এই ভুরিভোজের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ভুরিভোজ অনুষ্ঠানে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদেরও দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এভাবেই ভুড়িভোজের মাধ্যমে বরগুনার বামনা উপজেলার ‘ছোট ভাইজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ছোট ভাইজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুজেলেন্দু শীল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। শিক্ষক সমিতির এই নেতার ভয়ে ওই বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি নীরব ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া আরও অভিযোগ রয়েছে, এর আগে ওই বিদ্যালয়ে যিনি প্রধান শিক্ষক ছিলেন তাকে নিজ প্রভাব খাটিয়ে সরিয়ে দেন তিনি। বর্তমানে যদিও বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রয়েছে, তারপরও তাকে জিম্মি করেই নিজের সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সহকারী শিক্ষক সুজেলেন্দু শীল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজের নামে ২০১৯ সারের বরাদ্দ বাবদ স্লিপ ও ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক সরবরাহ করা হয়। চেকটি প্রধান শিক্ষকের নামে হলেও সমস্ত টাকা লেনদেন হয় সুজেলেন্দু শীলের অ্যাকাউন্টে। এরপর প্রধান শিক্ষকের তোয়াক্কা না করেই নিজের প্রভাব খাটিয়ে সমস্ত টাকা উত্তোলন করেন সুজেলেন্দু শীল। এমনকি নিজে নিজেই উত্তোলিত টাকা খরচ করেন।
একই সময় প্রধান শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস করা সত্ত্বেও তাকে অসুস্থ বলতে বাধ্য করারও অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে।
এ দিকে, টাকা উত্তোলনের পর নামমাত্র ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ করে সহকারী শিক্ষক সুজেলেন্দু শীল তিনটি খাসি কেটে আয়োজন করেন ভুড়িভোজের। এতে নিমন্ত্রণ করেন ম্যানেজিং কমিটিসহ এলাকার লোকজনকে। ফলে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি বলে জানা গেছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য বলেন, ওই স্কুলের সব সমস্যার মূল হোতা সুজেলেন্দু শীল। এমনকি শিক্ষা অফিসও তার বিরুদ্ধে নাকি কোনো কথা বলে না।
এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতির সঙ্গে কথা হলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ৩০ নং ছোট ভাইজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ম্যানেজিং কমেটির সভাপতি মো. আজিজুর রহমান জানান, তিনি সবকিছু জানেন না। কিন্তু যতটুকু জানেন সেসব ব্যাপারে ঊর্ধ্বতনদের অবগত করতে চাইলেও তাকে নিষেধ করেন সহকারী শিক্ষক সুজেলেন্দু শীল। পরে তিনিও এসব ব্যাপার এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে সাবেক বামনা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মোফাজ্জল হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘ওই স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামত ও স্লিপের বিল পাস হওয়ার আগেই আমি বদলি হয়ে চলে আসি। আমি যতটুকু জানি ছোট ভাইজোড়া স্কুলের সকল কিছু করতেন সহকারী শিক্ষক সুজেলেন্দু শীল।’
বিষয়টি নিয়ে বামনা উপজেলার বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নির্মল চন্দ্রশীল জানান, তদন্তের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।